আমার জলের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া…
হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা একটা ছোট গল্প আছে, নাম ‘পানি রহস্য’। গল্পে এক লোক দাবি করে, সে জলের উপর হেঁটেছে। গল্পে প্রমাণ দেবার আগেই সেই লোকটি মারা যায়।
মানুষ কি জলের উপর হাঁটতে পারে? কেউ কি পেরেছে? কেউ পেরেছে কিনা জানি না। আমি কিন্তু বাস্তবেই জলের উপরে হেঁটেছি। সেই জল কয় মিটারের গভীরতা ছিল? তা জানি না, তবে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ডুবে যাওয়া জন্য যথেষ্ট। আর সেই জলের উপর হেঁটে যাওয়ার বাস্তব গল্পই আজ বলছি।
আমি তখনও বিদ্যালয়ে যাই নাই অথবা মাত্রই শুরু করেছিলাম, ঠিক মনে পড়ছে না। আমরা থাকতাম ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলা কোয়াটারে। আমাদের বিদ্যালয়ের নাম ছিল, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই সময়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর নাম ছিল বাবু। সকাল, বিকাল কিম্বা সন্ধ্যা, আমি শুধু বাবুর সাথেই সময় কাটাতাম। আমাকে তখন সবাই সবুজ নামেই জানতো (আমার ডাক নাম ছিল সবুজ)। একদিন সকাল বেলা উপজেলা কোয়াটারের কাছেই, এক বিলের কাছে আমরা ঘুরতে যাই। আশেপাশে মানুষ তো দূরের কথা, কোন গবাদি পশুও ছিল না। আমি আর বাবু একমনে কথা বলতে বিলের তীর ঘেঁষে হেঁটে যাচ্ছিলাম। অনেক কচুরিপানা ছিল বিলে। যা বিলের তীরেও শুকিয়ে জমা হয়েছিল। আমরা সেই কচুরিপানার উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। এক সময় খেয়াল করলাম, আমাদের পায়ের নিচে কচুরিপানা একটু একটু ডুবে যাচ্ছে। ভালো করে খেয়াল করলাম, আমরা বিলের কিনারায় আর নেই, বিলের মাঝে চলে এসেছি। আমরা দুইজনেই ভয় পেয়ে যাই। কারণ আমাদের সামনে ও দুই পাশে জল, একমাত্র ফেরার পথ যেদিক দিয়ে এসেছি। আমাদের নিয়েই কচুরিপানার স্তূপ ভাসমান অবস্থায় সরে অন্য দিকে যাচ্ছে যাচ্ছে অল্প অল্প করে। বাবু আমাকে বলেছিল, দৌড় দাও সবুজ। আমার সেই অল্প বয়সে মনে হয়েছিল দৌড় দেওয়া যাবে না। আমি তাকে বলেছিলাম, বাবু দৌড় দিও না। আস্তে আস্তে হেঁটে ফিরে চল। আমরা ফিরে এলাম কচুরিপানার স্তুপের উপর হেঁটে হেঁটে।
সেদিন যদি আমরা দৌড় দিতাম, অথবা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতাম, তাহলে আজকের এই স্মৃতিকথা লেখার মত কেউ থাকতো না। ওটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ জলের উপর হেঁটে যাওয়া। ভয়ঙ্কর ছিল সেই সময়টা, যা আজও আমার স্মৃতির মাঝে গেঁথে আছে।